রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন
ক্রীড়া প্রতিবেদক : এমন উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে কতবার মাশরাফি বিন মর্তুজার ভরসা হয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান! মাস চারেক আগের এশিয়া কাপেই যেমন। আফগানিস্তানের শেষ ওভারে প্রয়োজন ৮ রান, অমন সময়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের আস্থা ওই বাঁহাতি পেসার। দলকে অবিশ্বাস্যভাবে ৩ রানে জিতিয়ে সে আস্থার প্রতিদান দারুণভাবে দেন মুস্তাফিজ।
বিপিএলে সেই বোলারকে যখন প্রায় অভিন্ন পরিস্থিতিতে কাল শেষ ওভারে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেন, মাশরাফির মনে আশঙ্কার চোরাস্রোত না বয়ে পারে না। তবু আশায় ছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক। উইকেটে সেট ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো রয়েছেন বলে। আর পর পর দুই ম্যাচে জেতা ম্যাচ হেরে না যাওয়ার সম্ভাবনাতেও। কিন্তু হলো তো তা-ই! ৪ উইকেট হাতে নিয়েও শেষ ৬ বলে ৯ রানের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে পারে না রংপুর। মুস্তাফিজ-জাদুতে রাজশাহী কিংস জিতে যায় ৫ রানে; অবিশ্বাস্যভাবে।
শেষ ওভারে চার-চারটি বলে ফরহাদ রেজার ব্যাট ছোঁয়াতে না পারাটাও অবশ্য কম অবিশ্বাস্য নয়!
আফগানদের বিপক্ষে সেই ম্যাচের সঙ্গে মুস্তাফিজের শেষ ওভারের ভেলকিতে মিল রয়েছে। কম মিল নয় রংপুর রাইডার্সের
সর্বশেষ দুই ম্যাচ হারের। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ১৮৪ রানের লক্ষ্যে এগোচ্ছিল দুর্দান্ত গতিতে। শেষ পাঁচ ওভারে দরকার ৪২ রান। হাতে ৮ উইকেট, ক্রিজে আশি পেরোনো ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো। এর পরও ম্যাচটি জিততে পারেনি বর্তমান শিরোপাধারীরা। কাল রাজশাহী কিংসের বিপক্ষেও প্রায় অভিন্ন চিত্রনাট্য। যদিও এবার জয়ের লক্ষ্য আরো অনেক কম। ১৩৬ রানের সেই লক্ষ্যে রুশোর ব্যাটে এগোচ্ছিল দারুণভাবে। শেষ পাঁচ ওভারে এবার প্রয়োজন ৪১ রান, অক্ষত ৫ উইকেট। ক্রিজে এবারও রুশো।
কিন্তু শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মঞ্চে তিন দিনের মধ্যে দ্বিতীয় বজ্রপাত হয় যে রংপুর রাইডার্সের ওপর!
কাল শেষ ওভারে প্রয়োজন ৯ রান। চল্লিশ পেরোনো রুশোর ব্যাটে জয়ের আগাম বার্তা। মুস্তাফিজের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিলেও শঙ্কার কালো মেঘ সেভাবে জমাট হতে পারেনি। অভিজ্ঞ ফরহাদ রেজা কি আর জানেন না, ১ রান নিয়ে প্রোটিয়া সতীর্থকে স্ট্রাইকে আনলেই দলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। কিন্তু মুস্তাফিজের করা পর পর ৪ বলে তো ব্যাটই ছোঁয়াতে
পারেন না তিনি। শেষটিতে মরিয়া হয়ে বাই রান নিয়ে স্ট্রাইকে ফেরেন রুশো। শেষ বলে তাই জয়ের জন্য রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন পড়ে ৭ রান। বৈধ ডেলিভারি হলেই তা সম্ভব না, টিকে ছিল শুধু ছক্কা মেরে ম্যাচ সুপার ওভারে নেওয়ার সম্ভাবনা। রুশো তা পারেননি। মাত্র ১ রান নেন তিনি। তিন দিনের মধ্যে দুটি জেতা ম্যাচ তাই মুঠো ফসকে বেরিয়ে যায় রংপুর রাইডার্সের।
তাতে বিপিএলের পাঁচ ম্যাচ শেষে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের প্রাপ্তি দুই জয়। চার ম্যাচেই ওই ৪ পয়েন্ট জমা রাজশাহী কিংসের অ্যাকাউন্টে।
শেষবেলায় উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচটির আগের অংশটুকু ম্যাড়মেড়ে। আগে ব্যাটিং করা রাজশাহী কিংস স্কোরবোর্ডে জমা করে গড়পড়তা ১৩৫ রান। নিজেকে টপ অর্ডারে তুলে আগের দুই খেলায় সাফল্য পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ কাল রানের খাতা খোলার আগেই মাশরাফির শিকার। জাতীয় দলের আরেক সতীর্থ সৌম্য সরকারের (১৮) প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংসও বড় হয়নি রংপুর রাইডার্সের অধিনায়কের কারণে। এ দুই উইকেটের মাঝে সোহাগ গাজীর বলে ফিরে যান মমিনুল হকও (১৪)। ৩৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বেকায়দায় রাজশাহী কিংস। পাঁচে নামা জাকির হোসেনের ৩৬ বলে অপরাজিত ৪২ রানে চ্যালেঞ্জিং স্কোরে তারা যেতে পারে।
মিরপুরের উইকেটে ১৩৫ রান চ্যালেঞ্জ করার মতো রান বটে, তবে তা করে কাল জিতে যাবে রাজশাহী কিংস, তা অনেকটা সময়জুড়ে বোঝা যায়নি। চমক দিয়ে ওপেনিংয়ে নামা মাশরাফি শূন্য রানে আউট হওয়ার পরও না। দুটি করে ছক্কা-চারে ১৪ বলে ২৩ রান করা ক্রিস গেইলের ঝড় থেমে যাওয়ার পরও না। রুশোর ব্যাটে যে জয়টা সব সময়ই ছিল রংপুরের নাগালে!
একেবারে শেষ ওভারে তা চলে যায় নাগালের বাইরে। তাতে মুস্তাফিজের জাদু না ফরহাদ রেজার নির্বুদ্ধিতা, কোনটির অবদান বেশি—তা নিয়ে অবশ্য তর্ক হতে পারে।